বশির আল-মামুন: চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী ও রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন লিচুবাগানে এবারও ভালো লিচুর ফলন এসেছে। বর্তমানে বাগানের গাছগুলোতে রসালো লিচু ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর, চাম্বল, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বৈলছড়ী এবং কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাফছড়ি, আগুনিয়াছড়া, বটতল, পাগলী পাড়া এবং ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কের বেশ কিছু এলাকায় অবস্থিত লিচুবাগান গুলোতে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি গাছে রসালো লিচুর দেখা মিলেছে। তবে বেশীর ভাগ গাছের লিচুই মোটামুটি পরিপক্ক হলেও এখনো কিছু গাছের লিচু কাঁচা রয়ে গেছে। চাষীরা আশা করছেন অল্প সময়ে সেই লিচুগুলো পরিপক্ষ হয়ে লাল রং ধারণ করবে।
বাঁশখালী ও কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা কৃষিনির্ভর। কেননা চাষিরা পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমী ফল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বিশেষ করে মৌসুমী ফল এই লিচু স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। কাপ্তাইয়ে লিচুর জাতের মধ্যে বোম্বাই, কালিপুরী, চায়না-থ্রি জাতের বেশী লিচু চাষ হয়ে থাকে। ভিটামিন-সি যুক্ত এই মৌসুমী ফলটি কমবেশী সবার কাছে জনপ্রিয়। অপরদিকে বাঁশখালীর কালিপুর,পুকুরিয়া, সাধনপুর, বৈলছড়ীর বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকার কৃষকেরা এই মৌসুমী ফল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রয় করে আসছে। ফলে কেবল মৌসুমী ফলের চাষাবাদ করেই তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
উপজেলার ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের আসামবস্তী সড়কের পাশেই দীর্ঘবছর লিচুচাষ করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দা সায়নুচিং মারমা। লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষ করে ভালোই চলছে তার সংসার। বর্তমানে তার বাগানে লিচুর ব্যাপক ফলন হওয়াতে লাভবান হবে বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়া, বর্তমানে তার বাগানে উৎপাদিত লিচু বাইরে গিয়ে কোথাও বিক্রয় করতে হয়না বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে লিচু সংগ্রহ করে। এতে তার কষ্ট হচ্ছেনা বরং অনেক উপকার হচ্ছে। তবে বতর্মানে বৃষ্টিপাত অনান্য মৌসুমের তুলনায় কম হওয়াতে অনেক লিচু গাছেই নস্ট হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানায়।
অপরদিকে, কথা হয় ওয়াগ্গা ইউনিয়নের আরেক সফল লিচুচাষী সমিরণ তনচংগার সাথে। তিনিও জানান লিচুর ভালো ফলন হলেও পানির সমস্যায় ভুগছেন তারা। বিশেষ করে পাহাড়ের উচুঁতে গড়ে ওঠা বাগান গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি দিতে পারলে ফলন আরো ভালো পাওয়া যেতো। এছাড়া এবছর তার বাগানের বেশ কয়েকটি গাছে লিচুর ভালো ফলন পাওয়া গেলেও অপর কিছু গাছে ভালো ফলন আসেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সে। তবে টোফেল জানান, পাহাড়ের কৃষকদের যদি সরকার কতৃক উন্নত মানের কিছু কৃষি সরঞ্জাম দেওয়া হয় তবে অনেক উপকার হবে তাদের।
এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মধুসূদন দে জানান, পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকেরা অনেক পরিশ্রমী। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য তারা অনেক চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও কৃষি বিভাগ থেকে সবসময় চেস্টা করি, তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করার জন্য। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্যোগে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন চাষীদের মৌসুমী ফল চাষে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগীতা করা হয়েছে। যার ফলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এই মৌসুমী ফল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। তাছাড়া এবার কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন লিচুবাগানে ভালো ফলন এসেছে। আমি মনে করি, এতে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে।
বাঁখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, এবার চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল ও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমী ফলের মধ্যে কালীপুরের লিচু স্পেশাল একটি ফল। এখানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষাবাদ হয়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লিচু বাগানীদের সহযোগিতা করেছি। এ বছর ৭ শত ৬০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লিচুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারে আগাম চাষিদের কিছু কিছু লিচু আসতে শুরু হলেও পুরোদামে আসবে সপ্তাহের মধ্যে।
Leave a Reply